25 Nov 2024, 12:26 pm

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফরকে ঘিরে বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কক্সবাজার জেলায় সাড়ে তিনলাখ কোটি টাকা ব্যয়ে এগিয়ে চলছে ৭৭টি মেগা প্রকল্পের কাজ। উন্নয়নের এ মহাযজ্ঞ চলমান অবস্থায় আগামীকাল বুধবার কক্সবাজার সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এ সফরকে কেন্দ্র করে এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতিও চলছে।
কাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের ইনানীতে ৩০টি দেশের নৌ বাহিনীর অংশগ্রহণে একটি মহড়া উদ্বোধন করবেন এবং বিকেলে জেলা সদরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হচ্ছে দোহাজারি থেকে ঘুমধুম রেললাইন সম্প্রসারণ কাজ। একই সময়ে শেষ হবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে কক্সবাজার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, সাড়ে তিনলাখ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ তদারক করছেন। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। টেকনাফের সাবরাং, জালিয়ারদিয়া, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ এবং কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুলে পর্যটনের জন্য বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক পর্যটন এলাকা হিসাবে কক্সবাজারের পরিচিতি যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
সমুদ্র ছুঁয়ে উঠানামা করবে বড় আকারের উড়োজাহাজ: কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পটির পরিচালক ইউছুপ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৪৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের অক্টোবরে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ৬ মে সম্প্রসারিত রানওয়েতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইসময় কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুটে উন্নীতকরণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা অনুসারে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এ প্রকল্পের আওতায় ২৯০ হেক্টর ভূমি বন্দোবস্ত এবং ৮.৩৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট হতে ৯ হাজার ফুটে এবং প্রস্থ ১০০ ফুট হতে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। সুপরিসর বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সুবিধার্থে রানওয়ের পিসিএম (ভিত) ১৭ হতে ৯০ এ উন্নীত করা হয়েছে।  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য আরো  ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে চলছে। এটি শেষ হলে বৃহদাকার উড়োজাহাজ সমুদ্র ছুঁয়ে এখানে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে রি-ফুয়েলিং সুবিধাও এখানে থাকবে।
ইউছুপ ভুঁইয়া বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি থেকে রানওয়ে রক্ষার সুরক্ষার্থে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রণীত ডিজাইন অনুসারে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ চলছে। সমুদ্র তীরে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপারেশনাল এলাকার চারিদিকে টহল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সর্বমোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৬৮৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বিমানের শিডিউল বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি যাত্রীবাহী বিমান ও ৬ থেকে ৮টি কার্গো বিমান উঠানামা করছে। রাতে বিমান উঠানামার জন্যও বিমানবন্দর প্রায় প্রস্তুত। সমুদ্রগর্ভে আরও লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলছে।’
মাতারবাড়ি থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান সরকার জানান, কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পটির ৮৮ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দু’টি জেটির কাজ শেষ হওয়ায় সেখানে কয়লা নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। এছাড়াও প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজ শেষ পর্যায়ে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৬শ’ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের জুনে আরো ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ (সিপিজিসিবিএল) এ প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করছে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১০ হাজার ৫ শ’ লোক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার্বিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজে যুক্ত রয়েছে। প্রায় ১ হাজার বিদেশী টেকনেশিয়ান এখানে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে এখানে ১১০টি জাহাজ ভিড়েছে।
প্রকল্পের যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে সাগরে কোন বর্জ্য না যায়।
মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাতারবাড়িকে বিশ্বে পরিচিত করবে।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারিতেও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ থেমে থাকেনি। একারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
২০২৩ সালে ট্রেন আসবে কক্সবাজারে: চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার রেললাইনের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ শেষ হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। এর কাজও শেষ পর্যায়ে।’
প্রকল্প পরিচালক জানান, কক্সবাজার ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ভবন। ২৯ একর জমির ওপর রেলস্টেশনটি আয়তন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুট। ভবনটি হবে ছয়তালা। মূলভবনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুকাকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। ভবনটিতে থাকবে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, যাত্রী লাউঞ্জ, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কার্যালয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14624
  • Total Visits: 1304759
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১২:২৬

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018